ঢাকাবুধবার, ২২শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে আবারো চট্টগ্রামে ফিরছেন আরএনবি’র হাবিলদার জসিম

শাফায়েত মোরশেদ (বিশেষ প্রতিনিধি)
অক্টোবর ২২, ২০২৫ ৪:০৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্য হাবিলদার জসিম উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বরং সম্প্রতি তাকে আবারও চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রেলওয়ের অভ্যন্তরে ক্ষোভ ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে সিপাহি হিসেবে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীতে (আরএনবি) যোগদান করেন জসিম উদ্দিন সরকার। পরবর্তীতে তিনি নায়েক ও হাবিলদার পদে পদোন্নতি পান। শুরু থেকেই তিনি প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমে ক্ষমতার বলয়ে প্রবেশ করেন এবং ধীরে ধীরে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, বদলি ও তদবির বাণিজ্যের মাধ্যমে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেন। পাহাড়তলী কারখানায় দায়িত্ব পালনকালে দায়িত্বে অবহেলা, ঘুষ আদায় এবং বহিরাগত সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে। ২০২১ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাবিলদার জসিম উদ্দিনের চুরির একটি ভিডিও ভাইরাল হলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। পরবর্তীতে তাকে শাস্তির বদলে বদলি করে সিজিপিওয়াইতে (চট্টগ্রাম পোর্ট ইয়ার্ড) হাবিলদার হিসেবে পদায়ন করা হয়।

কিন্তু সেখানেও তার অনিয়মের ধারা অব্যাহত থাকে। অভিযোগ রয়েছে, বিদেশ থেকে আমদানি করা রেল ইঞ্জিনের মূল্যবান যন্ত্রাংশ হারানো, ইয়ার্ড এলাকায় অবৈধ দোকান বসিয়ে মাসোহারা আদায়, সরকারি জায়গা ভাড়া দেওয়া, এবং ভুয়া টিএ/ডিএ বিল উত্তোলনের মতো একাধিক দুর্নীতির ঘটনায় তার সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ছিল

রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকজন সদস্য অভিযোগ করে বলেন, জসিম উদ্দিন ও তার ঘনিষ্ঠরা ডিউটির বিনিময়ে নিয়মিত অর্থ আদায় করেন। তাদের ভাষায়, “এখানে দাঁড়াতেও টাকা, বসতেও টাকা দিতে হয়।” ফলে নিচুতলার সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। ২০২৩ সালে সিজিপিওয়াই ইয়ার্ডে ইংল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত ৬৬ সিরিজের তিনটি ব্রডগেজ ইঞ্জিনের টাকশাল মোটরের কোটি টাকার লিড ক্যাবল হারিয়ে যায়। এ ঘটনাতেও হাবিলদার জসিম উদ্দিন সরকারের নাম উঠে আসে আলোচনায়। তবে শাস্তির পরিবর্তে তাকে ধীরে ধীরে আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে পদায়ন করা হয়।

সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তাকে আখাউড়া স্টেশনে বদলি করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন তদবির ও প্রভাবশালী মহলের মাধ্যমে তিনি বদলি আদেশ পরিবর্তন করে ষোলশহর স্টেশনে স্থানান্তরের নির্দেশ জোগাড় করেন। সাংবাদিক ও সচেতন মহলের প্রতিবাদের মুখে তা স্থগিত হয়।

তবে সর্বশেষ ১৯ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে তাকে আবারও চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায় হাবিলদার হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। অনেকেই বিষয়টিকে “অপকর্মের পুরস্কার” বলে অভিহিত করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরএনবির চীফ কমান্ডেন্ট বলেন, “হাবিলদার জসিমের বিষয়ে আমরা অবগত। তার পরিবার চট্টগ্রামে অবস্থান করায় মানবিক বিবেচনায় তাকে একবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে যদি সে পুনরায় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তবে রেলওয়ের ভেতরে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন— বারবার অভিযোগ সত্ত্বেও কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না এবং কীভাবে তিনি প্রভাব খাটিয়ে বারবার গুরুত্বপূর্ণ পদে ফিরে আসছেন?

বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।